যেভাবে সিভি লিখবেন

যেভাবে সিভি লিখবেন


কথায় আছে, আগে দর্শনধারী পরে গুণ বিচারি। অর্থাৎ বাহ্যিক সৌন্দর্য দ্বারাই মানুষ প্রথম আকৃষ্ট হয়। চাকরি প্রার্থীর সিভি বা জীবনবৃত্তান্তের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য। যুতসই উপস্থাপন আর তথ্যবহুল সিভির কদর সর্বত্রই পাওয়া যায়। বিশেষ করে নিয়োগদাতাদের নজর কাড়তে ভালো সিভির জুড়ি মেলা ভার। 

বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই সিভি লেখার বিষয়ে উদাসীন থাকে। অনেকেই আছেন, র্শটকাটে সিভি বানাতে দোকানের কমন ফরমেট ব্যবহার করেন। সেখানে থাকে রাজ্যের ভুল। কিন্তু মানসম্মত ও তথ্যবহুল সিভি বানাতে খুব বেশি কসরতেরও প্রয়োজন নেই। বেশকিছু টেকনিক্যাল ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রম করেই এটি তৈরি করা সম্ভব। 

  • তাহলে চলুন জেনে নিই, পূর্ণাঙ্গ সিভি লেখার কৌশল- 

  • নাম ও যোগাযোগের ঠিকানা : জীবনবৃত্তান্তের প্রথমে চাকরি প্রার্থীর পূর্ণ নাম লিখতে হবে। ডাকনাম বা ছদ্মনাম ব্যবহার করা উচিত নয়। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্রে যে নাম লেখা হয়েছে সেটিই ব্যবহার করতে হবে। ঠিকানা লেখার ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে। যোগাযোগের জন্য যে মোবাইল ফোন নম্বর সবসময় সচল থাকে সেটি দিতে হবে। একাধিক ইমেইল ঠিকানা থাকলেও চাকরিদাতারা বিরক্ত হন। ফলে সবসময় ব্যবহার হয় এমন একটি ইমেল ঠিকানায় সিভিতে উল্লেখ করতে হবে। 

  • ছবির ব্যবহার : জীবনবৃত্তান্তে অবশ্যই সাম্প্রতিক সময়ে তোলা একটি ছবি সংযুক্ত করতে হবে। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে একাধিক কালার থাকা যাবে  না। তাছাড়া প্রার্থীর চেহারা স্পষ্ট বোঝা যায় এমন ছবি সিভিতে ব্যবহার করাই উত্তম। তবে অতিরিক্ত কিংবা ফেসবুকের ক্যাজুয়াল ছবি সিভিতে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। 

  • পেশাগত লক্ষ্য : জীবনবৃত্তান্তে পেশাগত লক্ষ্য ভালোভাবে উপস্থাপন করতে হবে। সিভিতে ভাষার প্রাঞ্জলতাও থাকতে হবে। সঙ্গে সংক্ষিপ্ত  ও গোছানো ভাষায় পেশাগত লক্ষ্য সম্পর্কে বলতে হবে। এক্ষেত্রে বানান বা ব্যাকরণের কোনও ভুল হওয়া চলবে না। প্রার্থী যে পদে আবেদন করবেন সেই পদের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পেশাগত লক্ষ্য লেখা বাঞ্ছনীয়। অনেকেই আজগুবি, অপ্রাসঙ্গিক বা অবাস্তব কথা বার্তা সিভিতে উল্লেখ করেন। এটি মোটেই উচিত নয়।


  • শিক্ষাগত যোগ্যতা : সবশেষ একাডেমিক ডিগ্রির কথা প্রথমেই উল্লেখ করতে হবে। তারপর উচ্চ মাধ্যমিক এবং মাধ্যমিকের বিষয়ে লিখতে হবে। এক্ষেত্রে কোন বিভাগ, কোন অনুষদ, কত সালে পরীক্ষা হয়েছে এবং ফলাফল কেমন ছিলও সেটিও উল্লেখ করতে হবে। 

  • গবেষণামূলক কাজ : স্নাতকে অধ্যয়নকালীন কোনও গবেষণা বা রিপোর্ট প্রকাশিত হলে সেটি সিভিতে উল্লেখ করতে হবে। বিশেষ করে ইন্টার্নশিপ রিপোর্টের ব্যাপারে উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া কোনও জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিলে তার সংক্ষিপ্ত তথ্য যুক্ত করলে চাকরিদাতাদের আকৃষ্ট করা সম্ভব। 

  • পেশাগত অভিজ্ঞতা : সাধারণত স্নাতকের শিক্ষার্থী বা সদ্য উত্তীর্ণদের সরাসরি কোনও পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকে না। কিন্তু যে পদে চাকরির জন্য আবেদন করছেন, সেখানে পদ সংশ্লিষ্ট জানাশোনা সম্পর্কে উল্লেখ করা উচিত। সেটা হতে পারে কোন মেলায় বিক্রয়কর্মী বা কল সেন্টারে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা। এছাড়াও চাকরির প্রয়োজন এবং শর্ত অনুযায়ী অভিজ্ঞতা থাকলে উল্লেখ জরুরি। 


  • স্বেচ্ছাসেবী কাজের বর্ণনা : আদর্শ জীবনবৃত্তান্তে স্বেচ্ছাসেবী কাজের বর্ণনা থাকে। কোনও সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে সিভিতে সেটি উল্লেখ করা উচিত। প্রয়োজনে প্রত্যেকটি কাজের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া উত্তম। 

  • প্রশিক্ষণ সম্পর্কে : বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় যেসব কর্মশালা ও প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন সিভিতে সেসব উল্লেখ করা ভালো। কর্মশালার নাম ও আয়োজকদের সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করলে চাকরিদাতারা খুশি হন। তাই প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা কারা আয়োজন করেছে তাদের সম্পর্কে সিভিতে লিখতে হবে। 

  • ভাষাগত দক্ষতা : বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সাধারণত বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হয়ে থাকেন। যে ভাষায় যেমন দখল রয়েছে তেমনই সিভিতে উল্লেখ করতে হবে। যেমন কেউ শুদ্ধ উচ্চারণে ইংরেজি ও বাংলায় কথা বলতে সক্ষম হলে চাকরিদাতাদের সেটি জানানো দরকার। যদি বিশেষ কোনও ডিগ্রি থাকে তাহলে সে বিষয়ও লেখা জরুরি। 

  • কম্পিউটারে পারদর্শিতা : কম্পিউটার ছাড়া বর্তমানে অফিস চিন্তাও করা যায় না। কাজেই চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কম্পিউটারে পারদর্শী হতে হবে। অফিসে লেখালেখির কাজের জন্য ওয়ার্ড ফাইল, হিসাবনিকাশের জন্য এক্সেল ও উপস্থাপনার কাজের জন্য পাওয়ার পয়েন্ট ব্যবহার করা হয়। এগুলো পরিচালনায় পারদর্শী হলে চাকরিদাতাদের অবশ্যই জানিয়ে দেয়া উচিত। এছাড়া টেকনিক্যাল কোনও সফটওয়্যার সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা থাকলে সেটিও উল্লেখ করতে হবে। 

  • রেফারেন্স দিতে হবে : সম্প্রতি যারা স্নাতক পাস করেছেন, তারা সিভিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় শিক্ষকদের রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করতে পারেন। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের নাম ও পদবী ব্যবহার করতে হবে। নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের চাকরিদাতারা সিভিতে রেফারেন্সে যার নাম দেখতে পান তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এছাড়া অন্য কোনও পেশার পরিচিত কোনও পেশাজীবীর নাম ও পদবীও উল্লেখ করা যায়। 

  • অঙ্গীকারনামা : সিভিতে দেয়া সব তথ্য নির্ভুল ও সঠিক সেটি বলে দিতে হবে। অঙ্গীকারনামার নিচে প্রার্থীর স্পষ্ট স্বাক্ষর থাকতে হবে। চাকরিদাতারা তথ্য যাচাই করার অধিকার রাখেন। তাই ভুল তথ্য দেয়া উচিত নয়। মিথ্যা তথ্য দিয়ে ধরা পড়লে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আইনানুগ ব্যবস্থাও নিতে পারে। সে কারণে ভুল বা মিথ্যা তথ্য দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
Next Post Previous Post